০১:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে শরণখোলা, পরিনত হচ্ছে এক বর্জ্যের নগরীতে

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা শহরটি এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত এই শহরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। শহরের পাশের ঐতিহ্যবাহী রায়েন্দা খালটি তো বলতে গেলে ধুঁকে ধুঁকে মরছে প্লাস্টিক-পলিথিনে। শহরে নেই পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট।

এ ছাড়া পয়োনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে যায়, মূল শহরের রায়েন্দা ও পাঁচ রাস্তা অংশে স্থায়ীভাবে দুই সহস্রাধিক পরিবার বসবাস করে। এসব পরিবারের নিত্যব্যবহার্য পানির চাহিদা মেটানোর জন্য ভূমি অফিস ও জেলা পরিষদের শতবর্ষী দুটি পুকুর রয়েছে। কিন্তু সেই পুকুর দুটির পানি গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে।

ভূমি অফিসের পুকুরটির পানি কালো রং ধারণ করায় তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। শহরজুড়ে পানির জন্য হাহাকার চলছে।
আবর্জনায় ঢেকে গেছে টয়লেট

রায়েন্দা শহরের দুটি বাজারে সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার এই দুই দিন সাপ্তাহিক হাট বসে। উপজেলার প্রধান শহর হওয়ায় হাট বাদে এমনিতেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ থাকে এখানে।

অথচ মাত্র দুটি পাবলিক টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহার উপযোগী নেই একটিও। পাঁচ মাস আগে পাঁচ রাস্তা মোড়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের অগ্রাধিকার প্রকল্প থেকে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হলেও সঠিক পরিচালনার অভাবে সেটিও জনগণের কাজে আসছে না। টয়লেটটি ঢেকে গেছে ময়লা-আবর্জনায়।
যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে বর্জ্য

এত বড় একটি শহরে নেই বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান। হাজার হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির নানা ধরনের বর্জ্য নিয়ে ঢাকা হচ্ছে শহরের পাশের ঐতিহ্যবাহী রায়েন্দা খালে।

ওই খালটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দিন দিন খালটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে এসব বর্জ্যে। এ ছাড়া সড়কের অলিগলি ও ডোবায়ও ফেলা হচ্ছে বর্জ্য।
উপচে পড়ে ড্রেনের নোংরা পানি

অপরিকল্পিত ও অগভীর ড্রেনগুলো শহরের আরেক অন্যতম বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাসবাড়ির বেশির ভাগ টয়লেট-বাথরুমের সংযোগ এই ড্রেনের সঙ্গে। এসব টয়লেট-বাথরুমের ময়লা গিয়ে নামছে ড্রেনে। এই ড্রেনগুলো থেকে ঠিকমতো পানি চলাচল করতে না পারায় তা আটকে অনেক সময় উপচে নোংরা পানি সড়ক ও আশপাশের বাসাবাড়ির মধ্যে উঠে যায়। বিশেষ করে সামান্য বৃষ্টি হলে ড্রেনের পানির কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় মানুষের।

পাঁচ রাস্তা মোড়ের ইজি বাইকচালক ছিদ্দিক মিয়া, ভ্যানচালক বাবুল হাওলাদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোফাজ্জেল হোসেনসহ অনেকেই জানান, টয়লেটে তালা দেওয়া থাকে। চাবি থাকে চায়ের দোকানে। আশপাশের কিছু দোকানদার সেখান থেকে চাবি নিয়ে ব্যবহার করেন। কিন্তু বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ সেটি ব্যবহার করতে পারে না। ফলে টয়লেটের সামনে ও আশপাশে প্রস্রাব-পায়খানা করে।

রায়েন্দা বাজারের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ওয়াদুদ আকন, জুতা ব্যবসায়ী মুক্তা মৃধা, মুদি ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া জানান, এত বড় একটি বাজার এখানে কোনো পাবলিক টয়লেট নেই। বাজারের দুই মাথায় খালের পাড়ে দুটি পাবলিক টয়লেট আছে ঠিকই, কিন্তু তাতে কোনো মানুষ যেতে পারে না। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাবুল তালুকদার বলেন, বর্তমানে যেসব সমস্যা চলমান তা সরকারের বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ছাড়া সমাধান করা সম্ভব নয়। রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, জায়গার অভাবে পাবলিক টয়লেট করা যাচ্ছে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডাস্টবিন তৈরির জন্য এরই মধ্যে কয়েকটি এনজিওর সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ছাড়া জাইকা প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর ড্রেন নির্মাণ এবং পুকুর খনন করা যায় কি না, সে ব্যাপারে যোগাযোগ চলছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচ রাস্তা এলাকায় একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। সেটি পরিচালনার দায়িত্ব পরিষদের। শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুল ইসলাম বলেন, রায়েন্দা শহরের উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে।

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ
Get free post? Yes, Accept .

বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে শরণখোলা, পরিনত হচ্ছে এক বর্জ্যের নগরীতে

আপডেট সময় : ১১:১০:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা শহরটি এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত এই শহরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। শহরের পাশের ঐতিহ্যবাহী রায়েন্দা খালটি তো বলতে গেলে ধুঁকে ধুঁকে মরছে প্লাস্টিক-পলিথিনে। শহরে নেই পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট।

এ ছাড়া পয়োনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে যায়, মূল শহরের রায়েন্দা ও পাঁচ রাস্তা অংশে স্থায়ীভাবে দুই সহস্রাধিক পরিবার বসবাস করে। এসব পরিবারের নিত্যব্যবহার্য পানির চাহিদা মেটানোর জন্য ভূমি অফিস ও জেলা পরিষদের শতবর্ষী দুটি পুকুর রয়েছে। কিন্তু সেই পুকুর দুটির পানি গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে।

ভূমি অফিসের পুকুরটির পানি কালো রং ধারণ করায় তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। শহরজুড়ে পানির জন্য হাহাকার চলছে।
আবর্জনায় ঢেকে গেছে টয়লেট

রায়েন্দা শহরের দুটি বাজারে সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার এই দুই দিন সাপ্তাহিক হাট বসে। উপজেলার প্রধান শহর হওয়ায় হাট বাদে এমনিতেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ থাকে এখানে।

অথচ মাত্র দুটি পাবলিক টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহার উপযোগী নেই একটিও। পাঁচ মাস আগে পাঁচ রাস্তা মোড়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের অগ্রাধিকার প্রকল্প থেকে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হলেও সঠিক পরিচালনার অভাবে সেটিও জনগণের কাজে আসছে না। টয়লেটটি ঢেকে গেছে ময়লা-আবর্জনায়।
যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে বর্জ্য

এত বড় একটি শহরে নেই বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান। হাজার হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির নানা ধরনের বর্জ্য নিয়ে ঢাকা হচ্ছে শহরের পাশের ঐতিহ্যবাহী রায়েন্দা খালে।

ওই খালটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দিন দিন খালটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে এসব বর্জ্যে। এ ছাড়া সড়কের অলিগলি ও ডোবায়ও ফেলা হচ্ছে বর্জ্য।
উপচে পড়ে ড্রেনের নোংরা পানি

অপরিকল্পিত ও অগভীর ড্রেনগুলো শহরের আরেক অন্যতম বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাসবাড়ির বেশির ভাগ টয়লেট-বাথরুমের সংযোগ এই ড্রেনের সঙ্গে। এসব টয়লেট-বাথরুমের ময়লা গিয়ে নামছে ড্রেনে। এই ড্রেনগুলো থেকে ঠিকমতো পানি চলাচল করতে না পারায় তা আটকে অনেক সময় উপচে নোংরা পানি সড়ক ও আশপাশের বাসাবাড়ির মধ্যে উঠে যায়। বিশেষ করে সামান্য বৃষ্টি হলে ড্রেনের পানির কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় মানুষের।

পাঁচ রাস্তা মোড়ের ইজি বাইকচালক ছিদ্দিক মিয়া, ভ্যানচালক বাবুল হাওলাদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোফাজ্জেল হোসেনসহ অনেকেই জানান, টয়লেটে তালা দেওয়া থাকে। চাবি থাকে চায়ের দোকানে। আশপাশের কিছু দোকানদার সেখান থেকে চাবি নিয়ে ব্যবহার করেন। কিন্তু বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ সেটি ব্যবহার করতে পারে না। ফলে টয়লেটের সামনে ও আশপাশে প্রস্রাব-পায়খানা করে।

রায়েন্দা বাজারের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ওয়াদুদ আকন, জুতা ব্যবসায়ী মুক্তা মৃধা, মুদি ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া জানান, এত বড় একটি বাজার এখানে কোনো পাবলিক টয়লেট নেই। বাজারের দুই মাথায় খালের পাড়ে দুটি পাবলিক টয়লেট আছে ঠিকই, কিন্তু তাতে কোনো মানুষ যেতে পারে না। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাবুল তালুকদার বলেন, বর্তমানে যেসব সমস্যা চলমান তা সরকারের বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ছাড়া সমাধান করা সম্ভব নয়। রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, জায়গার অভাবে পাবলিক টয়লেট করা যাচ্ছে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডাস্টবিন তৈরির জন্য এরই মধ্যে কয়েকটি এনজিওর সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ছাড়া জাইকা প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর ড্রেন নির্মাণ এবং পুকুর খনন করা যায় কি না, সে ব্যাপারে যোগাযোগ চলছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচ রাস্তা এলাকায় একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। সেটি পরিচালনার দায়িত্ব পরিষদের। শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুল ইসলাম বলেন, রায়েন্দা শহরের উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে।