প্রত্যেক স্বামীই হচ্ছে এক একজন নারীর গৃহ কর্তা। স্বামী ছাড়া নারীদের বেঁচে থাকা আর না থাকা এক কথা। দৈনন্দিন জীবনে স্বামী-স্ত্রী সবসময় মিল মহব্বত থাকলেও মাঝে মাঝে খুনসুটি ও ঝগড়া বিবেদ লেগেই থাকে। অনেক সময় স্বামী তার স্ত্রীর রাগ কোনো সময় মেনে নিতে পারেনা। তাই স্বামীর মন জয় করার উপায় সম্পর্কে জেনে নিন।
কারণ পুরুষেরা একাধিক স্ত্রী বা পরকিয়াও করতে পারে। এমন স্বামীকে ইসলামিক এবং সুন্নতে আলোকে মন জয় করে নেওয়ার কতগুলো পরামর্শ আছে। আজ সেগুলো আলাপ আলোচনা করা যেতে পারে।
স্বামীর মন জয় করার উপায় বের করার জন্য আপনাকে স্বামীর পাশে থাকতে হবে। স্বামীকে ভালোবাসা ও নতুন জিনিস দিয়ে নতুনত্ব কিছু সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই স্বামীর মন জয় করতে পারবেন। আর স্বামী সবসময় হাসি-খুশী থাকবে। আপনার যেকোনে কথা শুনতে বাধ্য থাকবে।
ইসলামিক নিয়ম অনুসারে ও সুন্নতি নিয়মানুসারে স্বামীর মন জয় করার উপায়
১. বাহির থেকে স্বামী যখন ঘরে ফিরবে হাসিমুখে তাকে বরণ করে নিন। তার হাতের ব্যাগটা নিজের হাতে নিন। একটু ফ্রেশ হতে, একটু বিশ্রাম নিতে তাকে সুযোগ করে দিন। সম্ভব হলে লেবু ইত্যাদির শরবত বা ঠান্ডা পানি পরিবেশন করুন। মনে রাখবেন– দিনশেষে মানুষটা যখন আপনার কাছে ফিরে আসে, আপনাকে মলিনমুখে দেখতে অবশ্যই পছন্দ করবে না! সারাদিনের কার্যবিবরণী, ওটা আনো নি কেন এসবকিছু তখনই বলতে যাবেন না। পর্যাপ্ত বিশ্রামের পর যা ফিরিস্তি তুলে ধরুন।
২. সবসময় পরিপাটি ও সেজেগুজে থাকার চেষ্টা করুন। রাস্তায় কোন সাজুগুজুওয়ালী চোখে পড়লে আপনার স্বামী যেনো না ভাবে-কই আমার বউটা তো কখনো এরকম করে সাজে না! বরং সে যেন দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং এটা ভাবে যে আমার ঘরে তো আমার বউ রয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
৩. স্বামীর আয় যদি স্বল্প হয়, তবে এতেই সন্তুষ্ট থাকুন। অভিযোগ করবেন না। দুনিয়াটা তো মাত্র অল্প দিনের প্রিয় বোন! কী করবেন এতো ঐশ্বর্য্য দিয়ে। এটা ভাববেন, স্বামী তো রুজি করে আপনার জন্যই। ইচ্ছে করে কোনো স্বামীই বউকে ভাত-কাপড়ের কষ্টে রাখতে চায় না।
৪. বাপের বাড়িতে বা বান্ধবীদের কাছে সবসময় স্বামীর ভালোটা বলবেন। কখনো গীবত করবেন না। সবসময় আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করুন। এরচেয়ে খারাপ মানুষও তো আপনার স্বামী হতে পারতো। তাই আল্লাহর কাছে নিজের স্বামীর জন্য ভালো চাইবেন।
৫. একেক সময় একেক রকম সুস্বাদু খাবার খাইয়ে স্বামীকে বাগিয়ে নিন! সব পুরুষই একটু ভোজনবিলাসী হয়। আর সেটা যদি স্ত্রীর হাতের রান্না হয় তাহলে তো কথাই নেই। এভাবেই স্বামীর মন জয় করার উপায় সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন। প্রত্যেক নববধূর তার স্বামীর পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এজন্য নারীরা চিন্তা করে যে স্বামীরা কি খেতে দিলে খাবার বা রান্না পছন্দ করেন ।
৬. আপনি তাকে দ্বীনদার হিসেবে গড়ে তুলুন। আপনিই পারবেন! তাকে নামাজে যেতে উদ্বুদ্ধ করুন। দাড়ি না রাখলে অভিমান করুন। তাহাজ্জুদ বা ফজরের সময় না জাগলে পানি ছিটিয়ে দিন। তাকে নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন। যদি না পড়ে ইসলামিক কথাবার্তা বলুন।
এসনিউজ২৪ এ আপনি ইসলামি নিয়মে স্বামীর মন জয় করার উপায় সম্পর্কে জেনেছেন।
৭. একসাথে দু’জন মানুষ থাকলে ঝগড়া হওয়া একটা সিম্পল বিষয়। কিন্তু কখনোই তার সাথে উচ্চবাচ্য করবেন না। গলা উচিয়ে বা মুখের উপর আঙ্গুল তুলে কথা বলবেন না। ভুল যদি তারও হয়, আপনিই স্যরি বলুন। দেখবেন মানুষটা তখন তুলোর মত নরম হয়ে যাবে আপনার সামনে। আপনার জন্য তার ভিতরে একটা শ্রদ্ধাবোধও তৈরি হবে। তার গর্ব হবে আপনাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে সে নিজেকে ধণ্য মনে করবে।
৮. বিছানায় শুয়ে সারাদিনের ফিরিস্তিই শুধু তুলে ধরবেন না। মাঝেমধ্যে খোশগল্প করুন। ধাঁধা ও বিভিন্ন প্রশ্ন করুন এবং জোকস শুনান। বেচারা স্বামীর মন খারাপ থাকলে ভালো হয়ে যাবে। সারাদিন অপেক্ষায় থাকবে এই মুহূর্তটার! মাথা টিপে দিন। চুলে আঙুল চুবিয়ে টেনে দিন। এতে পুরুষরা খুউব আরাম পায়।
৯. শাশুড়ীকে মায়ের মতোই শ্রদ্ধা করুন। তার সেবা করাটাকে পুণ্য মনে করুন। কখনো রাগের মাথায় শাশুড়ী যদি কিছু বলেও ফেলে প্রতিউত্তর করতে যাবেন না। কখনই শাশুড়ীর বিরুদ্ধে স্বামীকে ‘কানপড়া’ দিবেন না। মোদ্দাকথা স্বামীফ্যামিলির প্রতিটি সদস্যকে আপন করে নিন। এটা স্পষ্ট যে বেশিরভাগ বিবাহিত মেয়েরা কীভাবে শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার পর শ্বশুরবাড়ির মন জয় করা যায় তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। পরিবারের সদস্যরা সবাই পছন্দ করে এমন কোন খাবার তৈরি করা যায়। কিংবা শাশুড়ির সেবা করা যায় কীভাবে। তাদের মন জয় করে মিশেমিশে থাকার উপায়।
১০. মাঝেমধ্যে স্বামীকে গিফট করুন। স্বামীর থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার উপায় কিংবা নিঞ্জা টেকনিক শিখে রাখবেন। তবে অজান্তে পকেট থেকে টাকা নিবেন না।নিজের প্রয়োজনে বলে টাকা নিয়ে সেখান থেকে টাকা জমে করে স্বামীর জন্য জামা কাপড় বা অন্য কিছু কিনে চমকিয়ে দিবেন।
১১. স্বামীর সম্পদের হেফাজত করুন। কখনোই কোনোকিছুর অপচয় করবেন না। একটু ভাববেন, টাকা রুজি করতে আপনার স্বামীর মাথার ঘাম পায়ে পড়েছে! আপনার স্বামী যদি স্বাবলম্বী হয় আপনার কোনো ইচ্ছেই ইনশাআল্লাহ অপূর্ণ থাকবে না। সদ্য বিবাহিত নারীরা জানার চেষ্টা করেন, কীভাবে আপনার পরিবারের দায়িত্ব পালন করবেন। এমনকি বিয়ের পর কীভাবে নিজের ব্যবসা চালানো উচিত কিংবা পরিবার কীভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে পারে।
১২. তার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করুন। অফিসে থাকলে মাঝেমধ্যে মেসেজ লিখুন তাকে। শেষে ছোট্ট করে লিখে দিন– ওগো আমি কিন্তু তোমাকে একটুও ভালোবাসি না! আমি আপনাকে ভালোবাসি এটা বলার চেয়ে ওইটার মধ্যে ভালোবাসাটা বেশি লুকিয়ে থাকে। এটা রাগ বা অভিমান বুজাবে।
১৩. রাতে খাবার নিয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করুন। একা খাবেন না। তাকে খাইয়ে দিন। স্ত্রী খাইয়ে দেবে, সব স্বামীদের থাকে এটা পরম চাওয়া। আর আপনি স্বামীর জন্য একটু কস্ট করে দেরীতে আসার পর একসাথে খাবেন।
১৪. স্বামীর সামনে কখনোই কোনো মেয়ের প্রশংসা করবেন না। আল্লাহ না করুন এতে হয়তো তার মনে মেয়েটির ব্যাপারে আগ্রহ জন্মাতে পারে, যা আপনার জীবনকে অন্ধকারে নিয়ে যেতে পারে। চাইলে সেই মেয়েটির ব্যাপারে আপনার স্বামী আগ্রহ প্রকাশ করতে চাইবে এবং তাকে নিয়ে ভারতে পারে। তাই ভুলেও এই কাজটি করবেন না।
১৫. স্বামী অপছন্দ করে এমন মানুষের সাথে কথা বলবেন না। অপছন্দনীয় কাজ সবসময় এড়িয়ে চলবেন। স্বামীর সামনে স্মার্টফোনে ডুবে থাকবেন না। আপনার ব্যক্তিগত কোনোকিছুই স্বামীর থেকে গোপন রাখবেন না। সবসময় সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখবেন নিজেকে। তাহলেই আপনি স্বামীর কাছে ধণ্য হবেন।
অধিকাংশ বিবাহিত নারীরা এই বিষয়ে বেশি জানতে চায় যে স্বামীর কাছে খুব আকর্ষণীয় কিভাবে দেখাতে চান। সমীক্ষা দেখায় যে বিবাহিত নারীরা তাদের স্বামীর কাছে কীভাবে আকর্ষণীয় দেখাবে তার জন্য অনেক ভাবেই জেনে থাকে। বিয়ের পর নতুন একজন মানুষের সঙ্গে থাকা এবং তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার একটি ব্যাপার থাকে। তাই স্বামীর মন জয় করে সুখে শান্তিতে সংসার করতে সুগলের সাহায্য নেন নারীরা। বিয়ের পর নারীরা বেশি চিন্তা করে যে কীভাবে স্বামীর মন জয় করা যায়। স্বামীর সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেওয়া যায়, কীভাবে তাকে মুগ্ধ করা যায়।
সবশেষে বলবো স্বামী শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রভু। এখন আপনি অবশ্যই জানেন, আপনার প্রভু কিভাবে সন্তুষ্ট হবে? তাঁর ভালোবাসার প্রতিদানে তাঁকেও আপনার ভালো বাসা দিয়ে মন উজার করে নিতে হবে।
তবে স্বামীকে প্রভু না বানিয়ে বন্ধু বানান, এতে আপনি ভালোবাসার প্রেমিকা হিসেবে স্বামীর কাছে শ্রেয় হবেন। সবসময় বলবো স্বামীকে বেশি শ্রদ্ধা নয়, ভালবাসুন, ভক্তি নয়, নিজেকে উজার করুন। তাতেই আপনি নিজেকে সুখী ভাবতে পারবেন।
ত্যাগ: স্বামীর মন জয় করার উপায়, কিভাবে স্বামীর মন পাওয়া যায়, স্বামীর রাগ দুর করার উপায়, স্বামীকে কিভাবে কাছে পাওয়া যায়, কি করলে স্বামী বেশি ভালোবাসবে, স্বামীকে হাসি খুশি রাখার উপায়, যেভাবে স্বামীকে বশ করতে হয়, স্বামীকে বাধ্য করার উপায়